Header Ads Widget

Responsive Advertisement

রাজবাড়ী জেলার ৫ সরকারি হাসপাতালে নেই চোখের ডাক্তার

 রাজবাড়ী জেলায় ১২ লাখ মানুষ। কিন্তু এখানে নেই কোনো চোখের ডাক্তার। জরুরি হয়ে পড়লে প্রাইভেট হাসপাতাল অথবা পাশের জেলাই ভরসা। বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, অতিরিক্ত মোবাইল ফোনে চোখের ওপর চাপ বাড়লেও এ নিয়ে নেই কোনো সতর্কতবার্তা। কোনো চোখের ডাক্তার না থাকায় রোগীদের ছুটে হয় ঢাকায়। এটা অতিরিক্ত অর্থ ও সময় দুইয়ের অপচয় ঘটাচ্ছে।

প্রতিদিনই নানা সমস্যা নিয়ে রোগীরা জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। এই রোগীদের মধ্যে বড় অংশ চোখের রোগী। কিন্তু জেলায় সরকারি কোনো চোখের হাসপাতালই নেই। এর চেয়েও বড় সমস্যা চোখের ডাক্তারই নেই। চোখের যেকোনো সমস্যায় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে। এতে রোগীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে। পোহাতে হচ্ছে অশেষ ভোগান্তি।

জানা যায়, জেলার মানুষের চিকিৎসার জন্য ১০০ শয্যাবিশিষ্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালটি জেলার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। এই হাসপাতালে দুজন চোখের ডাক্তার ছিলেন। হাসপাতালে প্রতি মাসে গড়ে ২০০টি চোখের বিভিন্ন ধরনের অপারেশন করা হতো। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চোখের দুজন ডাক্তার একসঙ্গে বদলি হয়ে গেছেন। তারপর থেকে হাসপাতাল চলছে চোখের ডাক্তার ছাড়াই।

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আওতায় পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। পাঁচটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটিতেই চোখের ডাক্তার নেই।




রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় চক্ষু কনসালটেন্টের রুমে তালা ঝুলছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশেই বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার। সেখানে রোগীরা চোখের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য টিকিট চাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে, চোখের ডাক্তার নেই। রোগীরা হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

জেলা সদর হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫৭ শতাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য। এর মধ্যে অনেকেই জেলার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তিতে চলে গেছেন। চিকিৎসক সংকটে বন্ধ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অস্ত্রোপচার। চিকিৎসক না থাকায় গুরুতর অসুস্থ রোগীকে যেতে হয় ফরিদপুর অথবা ঢাকায়। এতে মারা যায় অনেক রোগী। শূন্যপদ পূরণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন এসএম মাসুদ। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসক সংকট থাকার পরও লবিং করে ব্যক্তিগত সুবিধায় অন্যত্র সংযুক্ত আছেন অনেক চিকিৎসক।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চিকিৎসক না থাকায় একদিকে যেমন সাধারণ মানুষকে কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বেশিমাত্রায় পরিশ্রম করতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে প্যাথলজিসহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র থাকলেও চিকিৎসক সংকটে সেগুলো দিয়ে নিয়মিত সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

রাজবাড়ী সিভিল সার্জন ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জেলা সদর হাসপাতালসহ পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের পদ রয়েছে ১৫৯টি। এরমধ্যে ৭৩ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ১৭ জন চিকিৎসক জেলার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় চিকিৎসকের শূন্যপদের হার ৫৭ শতাংশ।

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে মঞ্জুরিকৃত চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৪৩টি। এর মধ্যে ১৮ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। মোট পদের মধ্যে সিনিয়র কনসালটেন্টের পদ রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে ৮টি পদই শূন্য। গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালে নেই কোনো চোখের ডাক্তার। এ ছাড়া সহকারী সার্জন ৪টি, জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলজি, মেডিসিন, কার্ডিওলজি, রেডিওলজি ও চক্ষু চিকিৎসকের ১টি করে পদ শূন্য রয়েছে।

রাজবাড়ী পৌর শহর উপজেলার চন্দন ইউনিয়নের বাসিন্দা আলী রেজা চোখের সমস্যা নিয়ে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে এসেছেন। টিকিট কাউন্টারে টিকিট চাইলে কাউন্টার থেকে বলা হয় চোখের ডাক্তার নেই। তিনি বলেন, ‘আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার নেই। এখন বাইরে থেকে কোনো বেসরকারি ক্লিনিকে চোখ দেখাতে হবে।’

পরিবেশবিদ এমদাদ সালেহীন বলেন, ‘জেলার কোনো সরকারি হাসপাতালে চোখের ডাক্তার নেই। এটি বিস্ময়কর ব্যাপার।’

রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) জিয়াউল আহসান বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। জানুয়ারি থেকে চক্ষু চিকিৎসক নেই।’


সূত্র : প্রতিদিনের বাংলাদেশ 




Post a Comment

0 Comments